রাজশাহীতে করোনা শনাক্ত ল্যাব স্থাপন, পরীক্ষা বুধবার

করোনাভাইরাস সংক্রমিত কোভিড-১৯ রোগ শনাক্তে ঢাকার বাইরে রাজশাহীতেই প্রথম পলিমার চেইন রিঅ্যাকশন (পিসিআর) মেশিন স্থাপন করা হচ্ছে।রাজশাহী মেডিকেল কলেজে (রামেক) এখন পুরোদমে চলছে ল্যাব প্রস্তুতের কাজ। আগামী মঙ্গলবারের মধ্যেই কাজ শেষ হবে। আর বুধবার থেকেই ল্যাবে করোনা পরীক্ষা শুরু হবে।

এর মধ্য দিয়ে রাজশাহীর করোনা পরিস্থিতি নিয়ে রাজশাহীর চিকিৎসক এবং সাধারণ মানুষের উৎকণ্ঠার অবসান হবে। কারণ, কারও জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও পাতলা পায়খানার মতো কোভিড-১৯-এর উপসর্গ থাকলে তার নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হবে দ্রুত সময়ের মধ্যেই। ফলে অজানা আতঙ্ক আর ভয় দূর হবে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী বলেন, রাজশাহীতে এখনও করোনার কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি। তারপরও চিকিৎসকরা দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকছেন। তবে পিসিআর মেশিন চালু হয়ে গেলে তখন এই উৎকণ্ঠা কেটে যাবে। কারণ, তখন নিশ্চিতভাবেই বলা যাবে কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি না।

তিনি বলেন, কেউ শনাক্ত হলে তখন তার ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে চিকিৎসা কার্যক্রম চালানো যাবে। দ্রুত রোগ শনাক্ত হওয়ার কারণে তার চিকিৎসাও ভালো হবে।

বাংলাদেশে প্রথম কোভিড-১৯-এর রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই পিসিআর মেশিন আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। অবশেষে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই মেশিন আসে রাজশাহীতে। এখন রামেকের ভাইরোলজি বিভাগের পাঁচটি কক্ষে ল্যাব স্থাপনের কাজ চলছে।

রোববার দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় ২০ জন শ্রমিক বিরতিহীনভাবে ল্যাব প্রস্তুতের কাজ করছেন।

রামেকের অধ্যক্ষ জানালেন, রোববারের মধ্যেই তারা অবকাঠামোগত কাজ শেষ করতে পারবেন বলে আশা করছেন। সোমবার মেশিন স্থাপন করা হবে। এর পরের দিন মঙ্গলবার ঢাকা থেকে একটি টিম এসে মেশিনটির ব্যবহার দেখাবেন। তারপর বুধবার থেকে রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করা সম্ভব হবে বলে তারা মনে করছেন।

এ দিকে শনিবার দুপুরে রাজশাহী-২ (সদর) আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেন।

এ সময় ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, আমাদের দাবি অনুযায়ী পিসিআর মেশিন এসেছে। ল্যাব স্থাপনের পর ঢাকা থেকে অভিজ্ঞ ব্যক্তি এটির অপারেটিং (ব্যবহার) দেখাবেন এবং এখানকার চিকিৎসকদের শিখিয়েও দিয়ে যাবেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীর পর রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও পিসিআর মেশিনে করোনা শনাক্ত করার কাজ শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব বিভাগীয় শহরেই মেশিনটি দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর)। তবে প্রথম মেশিনটি পেয়েছে রাজশাহী।

অপরদিকে রোববার দুপুরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে সংবাদ সম্মেলন করেও আগামী বুধবার থেকে করোনাভাইরাস শনাক্ত শুরু হবে বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী। এ ছাড়া সোমবার থেকে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা সংক্রান্ত সব তথ্য সাংবাদিকদের জানানো হবে।

সংবাদ সম্মেলনে করোনা চিকিৎসায় হাসপাতালে একটি টিম গঠন করা হয়েছে জানিয়ে চিকিৎসা টিমের প্রধান ডা. আজিজুল হক আযাদ বলেন, হাসপাতালের সব চিকিৎসকের পিপিই নিশ্চিত করা হয়েছে। সর্দি ও কাশি নিয়ে যারা চিকিৎসা নিতে আসবেন, তাদের জরুরি বিভাগের বাইরে ক্যাম্প করে চিকিৎসা দেয়া হবে। এ ছাড়া যে সব রোগীর মধ্যে ন্যূনতম করোনার লক্ষণ মিলবে তাদের হাসপাতালের ৩৯ ও ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেয়া হবে। আর করোনা নিশ্চিত হলে তাদের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক ইউনিটে চিকিৎসা দেয়া হবে।