Banglar Unnoyon :: বাংলারউন্নয়ন.নেট

দেশেই তৈরি হবে বিশ্বখ্যাত হুন্দাই গাড়ি

অনলাইন ডেস্ক:

বাংলারউন্নয়ন.নেট কম

প্রকাশিত : ০২:৫০ পিএম, ২০ জানুয়ারি ২০২৩ শুক্রবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

স্মার্ট ও উন্নত দেশে পরিণত হতে আরও একটি মাইলফলক স্পর্শ করেছে বাংলাদেশ। এতোদিন দেশে গাড়ি সংযোজন করা হলেও এবার প্রথমবারের মতো দেশের তৈরি হতে যাচ্ছে নতুন গাড়ি। 

দেশের মাটিতে বিশ্বখ্যাত হুন্দাই গাড়ি নির্মাণ করবে ফেয়ার টেকনোলজি। ফলে ‘ম্যাড ইন বাংলাদেশ’ বা বাংলাদেশের তৈরি- ট্যাগে গাড়ি নির্মাণ করবে বাংলাদেশ। যার মাধ্যমে গাড়ি উৎপাদনকারি দেশের খাতায় নাম লিখালো বাংলাদেশ। 

বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) গাড়ি তৈরির কারখানা উদ্বোধন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে দেশে গাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু হওয়াকে ঐতিহাসিক ঘটনা বলে মন্তব্য করেছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। 

তিনি বলেন, দ্রুত অগ্রসরমান বাংলাদেশের প্রতীক হয়ে এখন থেকে রাজপথে চলবে মেইড ইন বাংলাদেশ হুন্দাই ‘এসইউভি’গাড়ি।

কোরিয়ার বিশ্বখ্যাত অটোমোবাইল জায়ান্ট হুন্দাই-এর সহযোগিতায় ফেয়ার টেকনোলজি গাজীপুরের কালিয়াকৈর-এ  বঙ্গবন্ধু হাই-টেক পার্কে গড়ে তুলেছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির এই অটোমোবাইল ফ্যাক্টরি।

‘স্টেপ ইনটু দ্য ফিউচার’এই লক্ষ্য নিয়ে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি দুটি শিল্প প্লটের উপর গড়ে তোলা হয়েছে অত্যাধুনিক ফেয়ার টেকনোলজি হুন্দাই ফ্যাক্টরি। এই ফ্যাক্টরিতে প্রাথমিক পর্যায়ে উৎপাদন করা হবে হুন্দাইয়ের বিশ্ব জুড়ে জনপ্রিয় এসইউভি ব্রান্ড-ক্রেটা।

 হুন্দাইয়ের এই কারখানায় আরও বেশ কিছু মডেলের গাড়ি উৎপাদন করা হবে বলে জানান ফেয়ার টেকনোলজি কর্তৃপক্ষ। এক হাজারের বেশি যন্ত্রাংশ এবং বডি আমদানি করে নিজস্ব পেইন্ট শপে একাধিক স্তরে রঙ করা এবং সংযোজনের মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে প্রতিটি ক্রেটা এসইউভি। 

উদ্যোক্তারা জানান, ফেয়ার টেকনোলজি, হুন্দাই ফ্যাক্টরি শুরুতে এক শিফটে চালু রাখলে বছরে তিন হাজার ক্রেটা এসইউভি উৎপাদন করা যাবে। ধারাবাহিকভাবে শিফট বাড়ানোর মধ্য দিয়ে তা দশ হাজার ইউনিটে উন্নীত করা সম্ভব। যেখানে কর্মসংস্থান হবে ৫ হাজার প্রকৌশলির। এখন সেখানে ৩০০ কর্মকর্তা কাজ করছেন। এরমাধ্যমে দেশে গাড়ি তৈরিরমতো দক্ষ জনশক্তি তৈরি হচ্ছে।

কারখানায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাবনার মোহাম্মদ রাসেল এখানে কর্মরত আছেন। তিনি বগুড়া পলিটেকনিক থেকে অটোমোবাইলে ডিপ্লোমা করেছেন। তবে গাড়ি তৈরির কোন অভিজ্ঞতা না থাকলেও মাত্র ৬ মাসের প্রশিক্ষনের মাধ্যমে তাকে কাজ শিখানো হয়। এরপর থেকে তিনি ১ বছর ধরে বিশ্ববিখ্যাত গাড়ির একজন কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন। 

রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের রাকিবুল হাসানের গল্পটাও একই। বিশ্বখ্যাত একটি গাড়ি কোম্পানিতে কাজ করার অভিজ্ঞাকে ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন। 

রাকিবুল বলেন, যখন একটা গাড়ি রাস্তা দিয়ে চলাচল করে তখন মনে হয় আমাদের বাচ্চারা চলাচল করছে। এখানে অনেক তরুণ কর্মীদের এখানে কর্মরত অবস্থায় দেখা গেছে। যারা একসময় দেশের বাইরেও কাজের সুবিধা পাবেল বলে আশা করছেন। 

গাড়ি তৈরির কারখানা উদ্বোধন করতে গিয়ে শিল্পমন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যতে বিদেশ থেকে রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানি করা পর্যায়ক্রমে বন্ধ করা হবে। দেশেই নতুন গাড়ি তৈরির দিকে যাবো আমরা।

মন্ত্রী বলেন, দেশেই জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে সাশ্রয়ী মূল্যে বিশ্বমানের গাড়ি উৎপাদন আমাদের সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। এ লক্ষ্য অর্জনে শিল্প মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে অটোমোবাইল শিল্পের বিকাশে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করছে। এ শিল্পের উত্তরোত্তর উন্নয়ন এবং টেকসই বিকাশের লক্ষ্যে এ নীতিমালা সহায়ক হবে। এর মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আঞ্চলিক অটোমোবাইল শিল্প উৎপাদনের কেন্দ্রে উন্নীত করা হবে। এ লক্ষ্য অর্জনে সরকার অটোমোবাইল শিল্প উন্নয়নে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে।

সভায় বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন,  দেশের মানুষের সক্ষমতা বাড়ছে। এখন প্রায় ৫২ লাখ গাড়ি চলাচল করে রাস্তায়। যা প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। ফলে এসব চাহিদার জোগান দিতে পারবে হুন্দাই। তাদের কারখানা করার মাধ্যমে দেশের শিল্পায়নের সমৃদ্ধি ও সম্ভাবনা বিশ্বের কাছে তুলা ধরা সম্ভব হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে এটি অন্যতম একটি মাইলফলক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশে নিযুক্ত কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং-কিউন বলেন, এটা দুই দেশের সম্পর্ক ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে গেম চেঞ্জার হবে। বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ গাড়ি উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠান এখন বাংলাদেশে। মাত্র ২ বছরে আমরা এখানে করাখানা করেছি। এখানে আরও বিনিয়োগ করতে চাই আমরা।

হুন্দাই মোটরের ভারতের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উনসো কিম বলেন, তরুণ ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে নতুন নতুন ফিচার নিয়ে আসবো আমরা। গাড়ির দামও তুলনামূলক কম হবে।

ফেয়ার টেকনোলজির ডিরেক্টর ও সিইও মুতাসসিম দায়ান বলেন, বিশ্বসেরা হুন্দাই গাড়ি উৎপাদনে বাংলাদেশের সক্ষমতার প্রমাণ রাখতে পেরে আমরা গর্বিত। এর মধ্য দিয়ে আরও একধাপ এগিয়ে গেল উন্নয়নশীল বাংলাদেশ। অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক দামে দেশের মানুষের কাছে আমরা এই গাড়ি পৌঁছে দেবো। বিশ্বমানের বিক্রয়োত্তর সেবা এবং সুলভ মূল্যে সব ধরণের স্পেয়ার পার্টসের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে বলেও জানানতিনি।
 
কোম্পানিটি বলছে, বিশ্বের ৯টি দেশ থেকে যন্ত্রাংশ আমদানির মাধ্যমে এখন গাড়ি তৈরি করা হবে। তবে সামনে এসব যন্ত্রও দেশে তৈরি করা। গাড়িতে ৭ ধাপের রং করা হচ্ছে এখানে। দেশিয় সফটওয়্যার ব্যহার করা হচ্ছে। ভারতে এসব ক্রেটা গাড়ির দাম ১০ লাখের মধ্যে। তবে দেশের বাজারে দাম এখনো ঠিক করা না হলেও তা ৪০ লাখে গিয়ে ঠেকবে বলে জানা গেছে। অবশ্য এ বিষয়ে বিস্তারিত এ সপ্তাহে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন তারা। এখন ১০০র মতো গাড়ি তৈরি করা হয়েছে করাখানায়। দ্রুতই এসব গাড়ি বাজারে ছাড়া হবে। ফলে কমে আসবে গাড়ি আমদানি। 

উল্লেখ্য, হুন্দাই গাড়ির ক্রেতাদের সুবিধার্থে ফেয়ার টেকনোলজি এরই মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে গড়ে তুলেছে একাধিক সেলস, সার্ভিস ও স্পেয়ার পার্টস (থ্রি-এস) সেন্টার। পাশাপাশি সিলেট, বগুড়াসহ দেশের প্রধান নগরীগুলোতে আরো অনেকগুলো থ্রি-এস সেন্টার প্রতিষ্ঠার কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ফেয়ার টেকনোলজি।