Banglar Unnoyon :: বাংলারউন্নয়ন.নেট

‘কৃষকের জানালা’ অনুসরণে মিলছে সফলতা

ডেস্ক রিপোর্ট

বাংলারউন্নয়ন.নেট কম

প্রকাশিত : ০৭:০৮ এএম, ৯ জুন ২০২১ বুধবার

২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে ৩০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে পেঁপে চাষ শুরু করেন ফেনী সরকারি কলেজ উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র শিমুল। চারাগুলো বেড়ে ওঠার একপর্যায়ে পাতা হলুদ হয়ে ঝরে পড়তে শুরু করে। নিকটজনদের পরামর্শে কাজ হচ্ছে না দেখে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে সহযোগিতা চান।

এক ব্যক্তি ‘কৃষকের জানালা’ নামে কৃষি সহায়ক একটি মোবাইল অ্যাপ এর লিংক দেন। এতে পেঁপে গাছে বিভিন্ন রকম সংক্রমণের ছবি ও পরামর্শ দেয়া রয়েছে। সরকারের এটুআই প্রকল্পের পরামর্শমূলক ই-সেবা নিয়ে পেঁপে বাগানে এখন ফল ধরতে শুরু করেছে।

ফসলের রোগ-বালাই রোধে ডিজিটাল উদ্ভাবন কৃষকের জানালা কার্যকর ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছেন কৃষিবিদ ও কৃষি উদ্যোক্তা। মোবাইলের মাধ্যমে বিনামূল্যে অফলাইন মোবাইল অ্যাপটি একদিকে চাষাবাদে কৃষকের খরচ কমিয়েছে। না বুঝে কীটনাশক ব্যবহার রোধ করতে সহায়তা করছে এবং কৃষকের দুশ্চিন্তা কমিয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ফেনীর ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, কৃষিকের জন্য তথ্য প্রযুক্তিগত উন্নয়নের একটি অন্যতম উদাহরণ হল ‘কৃষকের জানালা’ মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনটি। স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে এটি অনুসরণ করে যে কেউ ফসলের রোগ নির্ণয় ও সমাধানে সক্ষম হতে পারেন।

 মোবাইল অ্যাপ ‘কৃষকের জানালা’কৃষকের জানালা মোবাইল অ্যাপসটিতে প্রবেশ করে দেখা যায়, মাঠ, ফসল, ফুল, ফল, শাক-সবজি, মসলা এবং অন্যান্য ফসল শিরোনামে মোট ১২২টি ফসলের বিভিন্ন রোগ ও প্রতিকার সম্বন্ধে সচিত্র তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন উদ্ভিদের এক হাজারের অধিক রোগের লক্ষণ ও ওষুধ ব্যবস্থাপনা দেয়া হয়েছে। এর বাইরেও অন্য কোনো সমস্যা জানাতে সেবাগ্রহীতার জন্য সুযোগ রাখা হয়েছে।

২০১৭ সালে উদ্বোধনের পর সাম্প্রতিক সময়ে কৃষিভিত্তিক অ্যাপটি দ্রুত কৃষকপ্রিয় হয়ে উঠছে বলে জানান ফেনী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমীন আক্তার।

শহীদুল ইসলাম বলেন, কৃষিতে বৈপ্লবিক উন্নতি সাধিত হচ্ছে। এতে কৃষকের সংখ্যাও বাড়ছে। কৃষি বিভাগের সীমিত জনবল নিয়ে কৃষকদের চাষাবাদে সহায়তা করা খুবই কঠিন। তবে কৃষি সহায়তামূলক বিভিন্ন তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর অ্যাপ্লিকেশন কৃষক সেবায় ব্যাপক সহযোগিতা করছে। নিয়মিত প্রশিক্ষণ, মাঠ দিবস ও উঠান বৈঠকের মাধ্যমে কৃষকদের মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনগুলোর পরিচালনা ও ব্যবহার শিখিয়ে দেয়া হচ্ছে। এতে ফসলে রোগবাইলাই রোধ, সার-কীটনাশক প্রয়োগসহ বিভিন্ন বিষয়ে কৃষক নিজেই ভূমিকা রাখছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ফেনীর উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কান্তি সেন জানান, ফেনীতে কৃষকের সংখ্যা ১ লাখ ৬১ হাজার ৪৫৫ জন।

ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক জানান, স্মার্ট ফোন সহজলভ্য হয়ে যাওয়ায় কৃষকের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ কৃষি প্রযুক্তি নির্ভর হচ্ছে।

ফেনী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমীন আক্তার জানান, সদরে ৪৫ হাজার ১১৫ জন কৃষক রয়েছেন। শতকরা প্রায় ২০ ভাগ কৃষক ‘কৃষকের জানালা’ মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যবহার করছে।

 মোবাইল অ্যাপ ‘কৃষকের জানালা’কৃষক ফসলের রোগবালাই দূরীকরণে অনেক ক্ষেত্রে কৃষিবিদের পরামর্শ না নিয়ে কৃষিপণ্যের দোকানে চলে যায়। দোকানি বুঝে না বুঝে ওষুধ দিয়ে দেয়। এতে করে ফসল নষ্টের ঘটনা ঘটে। অনেক ক্ষেত্রে দোকানি বাড়তি বিক্রির লোভে অধিক সার-কীটনাশক প্রয়োগ করায়। ফলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কৃষকের জানালা এক্ষেত্রে ফসল বাঁচাতে বড় ভূমিকা নিচ্ছে।

ছাদ কৃষিতে কৃষকের জানালা অ্যাপ্লিকেশনটি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বলে মনে করেন শামীমা আক্তার নামে একজন নারী উদ্যোক্তা। তিনি বলেন, একটি ছাদে অনেক রকম গাছ থাকে। বিভিন্ন গাছের বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়। ফলে বারবার কৃষি কর্মকর্তা অথবা অভিজ্ঞ কারো কাছে যাওয়াটা অস্বস্তিকর। মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনটিতে শাক-সবজি, ফলমূলসহ বিভিন্ন উদ্ভিদ প্রসঙ্গে পরামর্শ দেয়া আছে। তাই দ্রুত এবং সহজে রোগ জানা ও সমাধান সম্ভব হচ্ছে।

শারমীন আক্তার জানান, ফেনী সদরে তিন শতাধিক কৃষি উদ্যোক্তা রয়েছেন। যারা ছাদ কৃষিতে সফল হয়েছেন। এদের প্রায় সবাই কৃষকের জানালাসহ অন্যান্য কৃষি অ্যাপস হতে সেবা নিয়ে থাকেন।