Banglar Unnoyon :: বাংলারউন্নয়ন.নেট

ক্রয়াদেশ বাতিল না করতে ক্রেতাদের প্রতি বিজিএমই সভাপতির আহবান

ডেস্ক নিউজ

বাংলারউন্নয়ন.নেট কম

প্রকাশিত : ০১:২৮ এএম, ২১ মার্চ ২০২০ শনিবার

বিজিএমই সভাপতি রুবানা হক বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ৪১টি ব্র্যান্ডের ক্রেতাগোষ্ঠীর কাছে একটি জরুরি ইমেইল পাঠিয়েছেন। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস (কোভিড–১৯) পরিস্থিতিতে গার্মেন্টস রপ্তানিতে ধস নামার প্রেক্ষাপটে এই ইমেইল পাঠান তিনি।

রুবানা হক বাংলাদেশের ৪১ লাখ শ্রমিকের বেতন-ভাতা, বিশেষ করে আসন্ন দুটি ঈদের কথা বিবেচনায় নিয়ে আগামী জুলাই পর্যন্ত কোনো ক্রয়াদেশ বাতিল বা প্রত্যাহার না করার জন্য বায়িং অফিস গ্রুপের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন।

চিঠি দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক আজ রাতে বলেন, ‘আমাদের চার হাজার রপ্তানিমুখী কারখানার মধ্যে এ পর্যন্ত মাত্র ১৭১টি কারখানার কাছ থেকে ক্রয় আদেশ বাতিলের সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছি। এতেই দেখা গেছে, ৩৮ কোটি মার্কিন ডলারের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হতে চলেছে।’

সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র বলেছে, রপ্তানি ঝুঁকিতে চলে যাওয়ার পরিমাণ ইতিমধ্যে ১০০ কোটি ডলারও ছাড়িয়ে যেতে পারে। ১৯ মার্চ প্রথম আলোয় মুদ্রণ সংস্করণে ‘বড় সংকটের পথে পোশাক খাত’ শীর্ষক প্রতিবেদন ছাপা হয়। এতে বলা হয়, গত বুধবার পর্যন্ত ৮৪ পোশাক কারখানা থেকে ১০ কোটি ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হয়েছে।

বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ৪১টি ব্র্যান্ডের ক্রেতাগোষ্ঠীর কাছে রুবানা হকের পাঠানো ই–মেইলের অংশবিশেষের অনুবাদ নিচে দেওয়া হলো:

প্রিয় বন্ধুগণ, গতকাল আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। এই মেইল আপনাদের কাছে মধ্যরাতের অনেক পরে পাঠানো হয়েছে এবং আমাদের দিনটি মাত্র শেষ হয়েছে। এই টানাপোড়েনপূর্ণ সময়ে আমরা একত্রে থাকা এবং একসঙ্গে পথচলাই আশা করতে পারি। এটি আমাদের অংশীদারত্বের প্রথম বা শেষ পরীক্ষা নয়। তবে এটি সম্ভবত এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কঠিন। পুরো বিশ্বকে যখন মহামারি গ্রাস করছে, তখন আমাদের জীবন চলমান রয়েছে। অন্য বেশির ভাগ উৎপাদনশীল দেশের জীবন একইভাবে চলছে। এই ধরিত্রীর বুকে আমাদের ভূখণ্ডের মানুষদের বেছে নেওয়ার বিকল্প সীমিত।

আমি আপনাদের সবাইকে অনুরোধ করছি, দয়া করে ঐক্যবদ্ধভাবে এই সংকট মোকাবিলা করুন। বিশেষ করে ৪১ লাখ শ্রমিকের জীবন ও জীবিকার বিষয়টি আপনারা বিবেচনায় নিন। আমরা যখন সচেতনভাবে শ্রম ও শ্রমিকের মান উন্নয়নে সচেতন প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছি এবং সেটা বিরাজমান পরিস্থিতিতে একটি পরীক্ষার মুখোমুখি। এই পরিস্থিতি আমাদের সম্মিলিতভাবে পার করতে হবে। অন্যথায়, ক্রয়াদেশ বাতিলকরণ, তৈরি পোশাকের মজুত পড়ে থাকা এবং কারখানাগুলো থেকে কর্মীদের ছেড়ে দেওয়ার ঘটনাগুলোকে বিশ্ব দেখতে থাকবে এবং তাদের ব্যর্থ হতে দেওয়ার জন্য তারা আমাদের ক্ষমা করবে না।

আমরা আপনাদের সবিনয়ে নিবেদন করি, ক্রয় ফরমাশ বাতিল করবেন না কিংবা কিছু আটকে রাখবেন না। উৎপাদন চলতে দিন। জরুরি অবস্থায় আমরা বিলম্বিত পরিশোধ ব্যবস্থা মেনে নেব। তবে বর্তমানে যে স্টকগুলো রয়েছে, তা নিয়ে নিন, যাতে আমরা উৎপাদনে টিকে থাকি এবং আমাদের কর্মীদের বেতন দিতে পারি। সুতরাং, আগামী জুলাই মাস পর্যন্ত কোনো ক্রয়াদেশ বাতিল বা ফিরিয়ে নেবেন না। কারণ, সামনে দুটি ঈদ রয়েছে এবং বাংলাদেশ একটি উৎপাদনশীল দেশ।

আমরা কোনো সামাজিক অস্থিরতা মোকাবিলা করতে পারি না এবং আমরা এটা দেখতেও অনিচ্ছুক যে আমাদের বিপদের সময়ে আপনি একজন অংশীদার হয়েও আমাদের ফেলে চলে গেছেন। আমরা পুরোপুরি বুঝতে পারছি যে আপনারা কী অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন এবং আমরা এটাও জানি, আপনারা আমাদের বিদ্যমান বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পারছেন।

আমি আশা করি, আমি এই মেইলের মাধ্যমে একটি বন্ধুত্বের মনোভাব এবং আপনাদের সঙ্গে অধিকতর বোঝাপড়া এবং অংশীদারত্বের গুরুত্ব অবহিত করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা আপনাদের সেবায় নিয়োজিত থাকার আশা করি এবং আরও প্রত্যাশা এই যে আপনারা আমাদের অনুরোধ যুক্তিযুক্ত ও সঠিক বলেই অত্যন্ত সহৃদয়ে বিবেচনা করবেন।

—রুবানা