Banglar Unnoyon :: বাংলারউন্নয়ন.নেট

জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা

নিউজ ডেস্ক:

বাংলারউন্নয়ন.নেট কম

প্রকাশিত : ০৯:১০ পিএম, ১১ নভেম্বর ২০১৯ সোমবার

রোহিঙ্গা নিপীড়নকে গণহত্যা আখ্যা দিয়ে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতের কাছে বিচার চেয়েছে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। নিধনযজ্ঞ পেরিয়ে যাওয়ার প্রায় আড়াই বছর পর প্রথমবারের মতো কোনও দেশ এমন পদক্ষেপ নিলো। গত মাসেই গাম্বিয়া মামলা করার ঘোষণা দিয়েছিল। সে দেশের বিচারমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেল আবুবকর তামবাদউ মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সেনাবাহিনী ও অন্য সরকারি কর্তৃপক্ষের হাতে হত্যা, ধর্ষণ, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, নির্যাতন, বাস্তুচ্যুতি ও অন্যান্য মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য যেসব অনুষঙ্গ কাজ করেছিল, সেগুলো বহাল থাকার প্রসঙ্গ তুলে ধরে নিধনযজ্ঞের দায়ে সম্প্রতি মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) প্রেরণ বা যুগোস্লাভিয়া ও রুয়ান্ডার মতো ট্রাইব্যুনাল গঠনের আহ্বান জানান জাতিসংঘের তদন্তকারীরা। বিভিন্ন দেশের সরকার ও কোম্পানিগুলোকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক সীমিত করার আহ্বান জানানো হয়েছিল তদন্তকারীদের পক্ষ থেকে।

এর কিছুদিনের মাথায় গাম্বিয়া জাতিসংঘের আদালতে দেশটির বিরুদ্ধে মামলার পদক্ষেপ নিলো। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে মূলত জেনোসাইড কনভেনশন লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলাটি হয়েছে বলে দশটি বেসরকারি সংস্থার এক যৌথ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। এই উদ্যোগে সমর্থন দেওয়া সংস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে নো পিস উইদাউট জাস্টিস, ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর কন্সটিটিউশনাল অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস, দি ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস, গ্লোবাল জাস্টিস সেন্টারে ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো সংগঠন।

ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিস বা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে প্রথম জেনোসাইড কনভেনশন মামলা হয়েছিলো সার্বিয়ার বিরুদ্ধে ১৯৯৩ সালে এবং তাতে প্রমাণ হয়েছিলো যে সার্বিয়া বসনিয়া হার্জেগোভিনিয়ায় গণহত্যা প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়েছিলো।

কানাডা, বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া, তুরস্ক এবং ফ্রান্স জোর দিয়ে বলেছে যে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার গণহত্যা চালিয়েছে। ইসলামী দেশসমূহের সংগঠন ওআইসি তার ৫৭টি সদস্য দেশকে উৎসাহিত করেছে যেন তারা মিয়ানমারকে আদালতে নিয়ে আছে। 

গাম্বিয়ার পক্ষে এই মামলাটি যিনি করেছেন, সেই অ্যাটার্নি জেনারেল তামবাউ আন্তর্জাতিক গণহত্যা প্রসঙ্গে বিশ্বজুড়েই নন্দিত আইনজীবী। এর আগে তিনি রুয়ান্ডায়  গণহত্যা বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে প্রসিকিউটরের বিশেষ সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন।

গাম্বিয়া ও মিয়ানমার দু'দেশই ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ যেটি শুধু দেশগুলোতে গণহত্যা থেকে বিরত থাকা নয় বরং এ ধরণের অপরাধ প্রতিরোধ এবং অপরাধের জন্য বিচার করতে বাধ্য করে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ওআইসির প্রথম সদস্য হিসেবে গাম্বিয়ার এমন পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে বাকি সদস্য দেশগুলো বড় এক ধাক্কাই খেয়েছে।

তবে তামবাউয়ের এই পদক্ষেপে আন্তর্জাতিক সমর্থন জোরালো হচ্ছে। যেসব বেসরকারি সংস্থা এ উদ্যোগকে সমর্থন করছে তাদের মধ্যে আছে নো পিচ উইদাউট জাস্টিস, ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর কন্সটিটিউশনাল অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস, দি ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস, গ্লোবাল জাস্টিস সেন্টারে ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো সংস্থাগুলো।

ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিস বা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে প্রথম জেনোসাইড কনভেনশন মামলা হয়েছিলো সার্বিয়ার বিরুদ্ধে ১৯৯৩ সালে এবং তাতে প্রমাণ হয়েছিলো যে সার্বিয়া বসনিয়া হার্জেগোভিনিয়ায় গণহত্যা প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়েছিলো।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এসোসিয়েট ইন্টারন্যাশনাল জাস্টিস পরিচালক পরম প্রীত সিংহ বলছেন, "গাম্বিয়ার আইনি পদক্ষেপ বিশ্বের সর্বোচ্চ আদালতে একটি আইনি প্রক্রিয়ার সূচনা করলো যেটা প্রমাণ করতে পারে যে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের নিষ্ঠুরতা জেনোসাইড কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে"।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সাত লাখেরও বেশি মানুষ। ১৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত জাতিসংঘের অনুসন্ধানী দলের সবশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, রাখাইনে এখনও ছয় লাখ রোহিঙ্গা থেকে গেছে। তারা শোচনীয় পরিস্থিতিতে বসবাস করছে।