Banglar Unnoyon :: বাংলারউন্নয়ন.নেট

বিএনপির প্রযুক্তি বিরোধিতা নতুন কিছু নয়

শেখ আদনান ফাহাদ    

বাংলারঅর্জন.কম

প্রকাশিত : ০১:৪৭ পিএম, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ শনিবার

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে বেশ জোরেশোরে বিরোধিতা শুরু করেছে বিএনপি। বিএনপির সাথে সুর মিলিয়েছে তথাকথিত ‘নিরপেক্ষ’ ও ‘সুশীল’ দাবি করা কতিপয় ব্যক্তি ও তাঁদের গড়া কয়েকটি এনজিও ও অজনপ্রিয় রাজনৈতিক সংগঠন।

‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ইস্যুর মতই পরিস্থিতি। কোনোভাবেই আওয়ামী লীগ তথা বাংলাদেশকে স্থিতিশীল হতে দিতে চায় না এ গোষ্ঠী। যে কোন মূল্যে স্বাধীনতা ও মুক্তির সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়া আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চায় এরা। সাম্রাজ্যবাদী পশ্চিমাদের শেখানো গণতন্ত্রের বুলিতে এরা স্বাধীনতা-বিরোধী শক্তিকে ক্ষমতায় আনতে চায়।  

ইভিএম  অপরীক্ষিত কোন প্রযুক্তি নয়। পৃথিবীর অনেক দেশে নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহৃত হচ্ছে।  বাংলাদেশেও স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে ইভিএম পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। ইভিএম প্রযুক্তি বাংলাদেশের পরীক্ষায় ফেল করেছে এমন কিছু আমরা এখন পর্যন্ত জানি না।

যে বাংলাদেশ মহাশূন্যে স্যাটেলাইট পাঠাচ্ছে,  যে বাংলাদেশ পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প শুরু করেছে,  সে দেশে নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহৃত হবে এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু যে কোনো মূল্যে আধুনিক প্রযুক্তি ইভিএম ব্যবহার ঠেকাতে উঠেপড়ে লেগেছে বিএনপি এবং এর দোসররা।

প্রযুক্তি ও উন্নয়নবিরোধিতা বিএনপির এই প্রথম নয়, এর আগেও বিএনপি হাস্যকর যুক্তি দিয়ে সাবমেরিন কেবল সংযোগ ও তথ্য প্রযুক্তির বিকাশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। বাংলাদেশের তথ্য নাকি পাচার হয়ে যাবে, এ যুক্তিতে ক্ষমতায় থাকা বিএনপি বিনামূল্যে সাবমেরিন ক্যাবল প্রযুক্তি ব্যবহার করার সুযোগ পায়ে ঠেলে। সেই সাবমেরিন কেবল পরে আওয়ামীলীগ একান্ত প্রচেষ্টায় সংযুক্ত করেছিল।

আওয়ামী লীগ সরকারের হাত ধরেই বাংলাদেশ ডিজিটাল রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে। আওয়ামী লীগের ভালো উদ্যোগের বিরোধিতা করতে গিয়ে বিএনপি এখন ইভিএম এর বিরোধিতা করছে।

২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন গড়ার পরিকল্পনা আওয়ামী লীগের। এটা কোনোভাবেই বাস্তবায়িত হতে দিতে চায় না বিএনপি।

১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গাজীপুরের কালিয়াকৈরে হাইটেক পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। বিশাল জায়গাও নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে ২০০১ সালে সরকার পরিবর্তন হয়। বিএনপি ক্ষমতায় আসে। তারা আর উদ্যোগ নেয়নি।

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের অন্যতম নির্দেশদাতা ছিলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমানের ছেলে তারেক রহমান ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রধান পৃষ্ঠপোষক। বিএনপি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধী আর বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুনর্বাসন করেছে। বিএনপির ইভিএম বিরোধিতা তাই স্বাভাবিক।

শুধু বিএনপি নয়, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আশীর্বাদপুষ্ট বাংলাদেশী ‘সুশীল’ গোষ্ঠীও ইভিএম এবং আগামী নির্বাচন নিয়ে খুব তৎপর। এদের কাছে গণতন্ত্র মানে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির ক্ষমতায় বসা।  ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় বন্ধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নেও নেতৃত্ব দিয়েছিল। ২০১৮ সালেও এদের ভূমিকা সেই পুরনোকালের মতই।

পদ্মা সেতু ইস্যুতে এই সুশীল সমাজ আর তাদের মার্কিন তাবেদারদের ভূমিকা আমরা জানি। নিজ মুখে যুক্তরাষ্ট্র ইদানীং তেমন কিছু বলছে না। তবে এদের পোষা এজেন্টরা কথা বলছে, গোপনে মিটিং করছে, যে কোনো ইস্যুতে আন্দোলন হলে সেটাকে সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ দিতে চেষ্টা করছে। সব ষড়যন্ত্র এখন মানুষের সামনে পরিষ্কার।  

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর এক শীর্ষ ব্যক্তিকে সেদিন দেখলাম টেলিভিশনে ইভিএম নিয়ে খুব পাণ্ডিত্য জাহির করলেন। ইভিএম দিয়ে নাকি ক্রাইম হবে! মোবাইল ফোন দিয়ে তো অনেক ক্রাইম হয়। তাহলে মোবাইল ফোন প্রযুক্তি বাংলাদেশে বন্ধ করে দেন না কেন?

কয়েকজন টকশোজীবী অবিরত ইভিএম এর মত একটা উচ্চ পর্যায়ের প্রাযুক্তিক বিষয় নিয়ে কথা বলেই যাচ্ছেন। বিএনপি অন্ধের মত বিরোধিতা করছে। আওয়ামী লীগের পক্ষে যারা আসছেন তাদের ব্যাকগ্রাউন্ডও আমরা জানি।

একজন মানুষ কী করে এত বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হয়? তাহলে আর বুয়েট এর দরকার কী? এই দেশে ইভিএম প্রযুক্তি যারা ডেভেলপ করেছে সেই প্রকৌশলী টিম কিংবা সংশ্লিষ্ট বুয়েটের অধ্যাপক এবং তাঁদের মতো বিশেষজ্ঞরাই কেবল ইভিএম নিয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত দিতে পারেন।

অপ্রাসঙ্গিক লোকজন ডেকে এনে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে। নতুন জেনারেশন চ্যানেলগুলোর বোকামি নিয়ে হাসাহাসি করে। কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন লোকজনকে ডেকে এনে ইভিএম এর  বিষয়ে টক শো হওয়া উচিত।

লেখক: সাংবাদিক ও লেখক