পঞ্চাশ থেকে পটভূমি দেখা
উৎপল দত্ত

শুনি ঝরাপাতার ধ্বনি
ঝরাপাতা কষ্টের কথা বলে। ‘ফাল্গুনের বোহিমিয়ান’ বাতাসে গাছের পাতা ঝরে যায়। কী জানি কেন, মন খারাপ হয়ে যায়। মনের অন্ধিসন্ধি বড় বিচিত্র। হয়তো তাই। ঝরাপাতা আনন্দের ধ্বনি-বার্তা বয়ে আনে না। ব্যস্ত দিনে পথ চলতে পায়ের তলায় মোচড় খেয়ে যখন মড়মড় করে ঝরাপাতা ভাঙে, মন তখন উদাস হয়। একটু বিষণ্নতাও সেই সুযোগে উঁকিঝুকি দেয়। ন্যাড়াখোড়া গাছটির দিকে তাকালে একতাল শূন্যতা ছাড়া কিছুই নজরে পড়ে না। কোথায় হারিয়ে গেছে সেই সবুজ পাতার মর্মর!
ফাল্গুনের বাতাসে মন আলুথালু করার কপট ঝাপট আছে। মনে হয় একটু আগে ঠিক এখানে, খুব কাছেই যেন একটা কিছু ছিল, এখন আর নেই। ঝরে গেছে। এভাবে আমাদের জীবনে বসন্ত আসে, আর তার প্রথম অধ্যায় ঝরাপাতার গল্প। বসন্ত জগতজুড়েই উৎসবের ঋতু। আমাদেরও। পাতা-ঝরার পর যখন পত্র-পল্লবে প্রকৃতি আবার হরিৎ হয়ে যায়- একটি চেনা-অচেনা অনন্ত হরিয়ালের মতো- কপট বিষণ্নতা তখন পালায়। মুখর হয়ে ওঠে প্রাণ। প্রকৃতির ডাকে অন্তরের দরজা খোলে। ছোপছোপ লাল রঙের পলাশ, হলদে শাড়িতে নারী, বইমেলা, পঞ্চকবির পদাবলি, কবিতার পঙক্তি, বাউলের প্রাণহরা অধ্যাত্ম সুর বসন্তকে আসন পিঁড়ি দেয়।
ঋতুরাজ বলে কথা। যদিও মধ্যযুগের বৈষ্ণব পদাবলি থেকে রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত সাহিত্য আর সঙ্গীতে বসন্তের চেয়ে বর্ষার প্রভাব ও প্রাবল্য দুই দিক থেকেই বেশি। বাঙালীর জীবনে ফাল্গুনের উৎসবের রঙটি বাদ দিলে ধরা পড়ে আরেকটি রঙ। জেগে ওঠার রঙ- দ্রোহ। এই বসন্তে, এই ফাল্গুনেই ভাষার জন্য ঝরে গেছে একগুচ্ছ পলাশের মতো রক্তিম প্রাণ। এই বসন্তেই অগোচরে গজিয়ে উঠেছিল আমাদের স্বাধীনতার বীজ। সেই বীজমন্ত্র ১৯৭১ এ আমাদের দেয় একটি স্বভূমি- স্বাধীন দেশ, আমাদের নিজস্ব জাতিসত্তার স্বীকৃতি। আমরা ইতিহাসের অমোঘ আয়নায় ফিরে দেখি আমাদের আত্মপরিচয়। ফাল্গুন এলেই ঝরাপাতার কষ্ট তাই বুকে বাজতেই পারে। পলাশের রঙ এই নগরে ঝরে পড়া রক্তের রঙের কথা মনে করিয়ে দিতেই পারে। এর মধ্যে কোন বিভ্রম নেই তো!
ফাল্গুন তাই বাঙালির কাছে ঝরাপাতার-ই গল্প। গল্পটি শোকের, গল্পটি গৌরবের। গল্পটি আবার পত্র-পল্লবে ভরে ওঠা একটা বৃক্ষের কথা বলে। আমরা স্বপ্ন দেখি সম্পদে আর প্রাচুর্যে কবে তা মহীরুহ হবে। ষোল কোটি মানুষের স্বপ্নের মহীরুহ! আর তাদের প্রাণের কথা, স্বপ্নের স্পন্দনটি পাওয়া যায় বৈষ্ণব পদাবলির হৃদয় উৎসারিত পঙক্তিতে : ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে’।
বিক্ষুব্ধ আত্মা : পঞ্চাশ থেকে
পটভূমি দেখা
রাষ্ট্রভাষা নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের একরোখা মনোভাব, বাঙালীর সংস্কৃতি-অর্থনীতি বিলোপের শঙ্কা, অস্তিত্ব সঙ্কট, আলোচনা, প্রস্তাব, ইত্যাদির পাশাপাশি মিছিল-বিদ্রোহ-বিক্ষোভ যখন তুঙ্গে ওঠে তখন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সরাসরি বলেছিলেন যে বাংলা ভাষা অবহেলিত হলে তিনি ব্যক্তিগতভাবে বিদ্রোহ করবেন।
ফেব্রুয়ারি এলেই বাঙালীর সংবেদে ব্যথা-বিক্ষোভের তরঙ্গ খেলে যায়। তার মনোজগতে কয়েকটি পঙক্তির অনুনাদ তাকে আলোড়িত করে। আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি। আব্দুল গাফফার চৌধুরীর অবিস্মরণীয় এই গীতিকবিতাটি প্রথমে ‘একুশের গান’ শিরোনামে ছাপা হয়। আবদুল গাফফার চৌধুরীর বয়স তখন ১৯-২০। পড়তেন ঢাকা কলেজে। ভাষা-শহীদ রফিকের রক্তাক্ত লাশ দেখে তাৎক্ষণিক যন্ত্রণাকে নিজের ভেতর ধারণ করেন আবদুল গাফফার চৌধুরী। পরে প্রকাশ করেন কবিতায় যেখানে শোক-ব্যথা-দ্রোহ একত্রে গ্রন্থিত। গীতিকবিতার তার শেষ তিনটি লাইন জাগরণের ডাক ধরা পড়েছে:
‘জাগো মানুষের সুপ্ত শক্তি হাটে মাঠে ঘাটে বাঁকে
দারুণ ক্রোধের আগুন আবার জ্বালবো ফেব্রুয়ারি
একুশে ফেব্রুয়ারি একুশে ফেব্রুয়ারি’
(একুশের গান, আব্দুল গাফফার চৌধুরী)
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সূচনা পর্ব ১৯৪৮ সালের প্রথমদিক ধরে নেয়া হলেও এর বীজ উপ্ত হয়ে গিয়েছিল আরো আগে। প্রায় দেশ বিভাগের পরপরই রমনা রেসকোর্স ময়দানে যে ‘না’ ‘না’ আর্তস্বর শোনা গিয়েছিল সেই তারিখটি ছিলো ২১ মার্চ, ১৯৪৮। তথ্যটি সবার জানা, সেদিন গণসংবর্ধনায় পাকিস্তানের প্রথম গবর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, বলেছিলেন, আমি স্পষ্টভাবে আপনাদের বলতে চাই যে, উর্দু এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। অন্দরে এতকাল যা ঘটছিল সদরে সেদিন তা বেরিয়ে পড়লো। গণসংবর্ধনা থেকে বিক্ষোভের প্রত্যক্ষ স্ফূলিঙ্গ বুকে নিয়ে বাড়ি ফেরে মানুষ। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ তার এ উক্তি পুনরাবৃত্তি করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ২৪ মার্চ, ১৯৪৮ সালে। এর প্রতিক্রিয়া ছিলো আরো তীব্র। এর আগেই রেসকোর্স ময়দানে রাষ্ট্রভাষা নিয়ে জিন্নাহর বক্তব্যের সমালোচনা করে বিবৃতি দেন শেরে বাংলা একে ফজলুল হক।
১৭ নবেম্বর, ১৯৪৭ করাচিতে অনুষ্ঠিত হয় পাকিস্তান শিক্ষা সম্মেলন। এই সম্মেলনে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুর পক্ষে সুপারিশ করা হয়। ডিসেম্বরে এই সুপারিশের বিরুদ্ধে ছাত্র বিক্ষোভ হয়। এ মাসেই তমদ্দুন মজলিশের নুরুল হক ভূঁইয়াকে আহ্বায়ক করে প্রথম রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয়। পরবর্তী বছর ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলা ভাষার পক্ষে প্রায় সহস্র ব্যক্তির স্বাক্ষর সংবলিত একটি স্মারকলিপি রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটি সরকারকে দেয়। ১৯৪৮ সালের এই ফেব্রুয়ারিতেই তমদ্দুন মজলিস ও পূর্বপাকিস্তান ছাত্রলীগ ১১ মার্চকে প্রতিবাদ দিবস হিসেবে পালনের যৌথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ১৯৪৯, ১৯৫০, ১৯৫১ সালের ১১ মার্চ রাষ্ট্রভাষা দিবস পালিত হয়। পূর্ব পাকিস্তানে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলনের দাবি তীব্রতা পায়। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, ইব্রাহিম খাঁ ও ড. কাজী মোতাহার হোসেনের স্বাক্ষর সংবলিত স্মারকলিপি দেয়া হয় মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিনকে। সেটা ছিলো ২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫১ সাল। ২৭ জানুয়ারি ১৯৫২ পাকিস্তান মুসলিম লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন ঘোষণা করেন এ কথা। পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। সেই সঙ্গে তিনি তার নিজস্ব পর্যবেক্ষণ থেকে যোগ করেন, ইতিমধ্যেই উর্দু হরফে বাংলা লেখা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। খাজা নাজিমুদ্দিনের এ বক্তব্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদেরকে প্রত্যক্ষ, আনুষ্ঠানিক বিক্ষোভের বিরুদ্ধে ঠেলে দেয়। পাকিস্তান অবজারভার খাজা নাজিমুদ্দিনের বিরুদ্ধে ‘ছদ্ম ফ্যাসিজম’ শিরোনামে নিবন্ধ বের করে। পাকিস্তান অবজারভার এর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়।
২০ জানুয়ারি, ১৯৫২ সকল জনসভা, শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ মিছিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ সালে সকাল থেকে অবস্থান নেয় আগ্নেয়াস্ত্রসহ পুলিশ বাহিনী। সকাল প্রায় ১১টায় আমতলায় শুরু হয় ছাত্রসভা। নেতৃত্ব দেন গাজীউল হক। সভায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সমস্ত দুপুর এলাকাটি ছিলো ভূতুড়ে। থমথমে। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১০ জনের একেকটি গ্রুপে ছাত্ররা বেরুনো মাত্র পুলিশ বর্বর হামলা চালায়।
বিকেল ৩ টা দশ মিনিট। ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২। কোন উস্কানি ছাড়াই ছাত্রদের ওপর পুলিশ দুই দফায় ২৭ রাউন্ড গুলি চালায়। আনুমানিক ২১ জন হতাহত হয়। গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে বক্তব্য রেখে আইনসভা ত্যাগ করেন মৌলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ। সারা শহরে নেমে আসে শোকের ছায়া। ওই রাতেই নির্মিত হয় রাজশাহীর নিউ হোস্টেল প্রাঙ্গণে প্রথম শহীদ মিনার।
২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ রাতারাতি গড়ে তোলা হয় শহীদ মিনার। এই মিনারটি গড়ে তোলা হয় যেখানে ছাত্রজনতার লাশ পড়েছিলো সেখানে। মিনারটির নকশা করেছিলেন বদরুল আলম ও সাইদ হায়দার। ২৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ সালে পুলিশ ও সামরিক বাহিনী মিনারটি গুঁড়িয়ে দেয়। অন্তর্গত ক্ষোভ, শোক আর আবেগ-অশ্রু নিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৩ সালে পালিত হয় প্রথম শহীদ মিনার দিবস। গুঁড়িয়ে দেয়া ভাষা শহীদ স্মৃতি স্তম্ভের জায়গায় কাগজ আর কালো কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয় প্রতীকী শহীদ মিনার।
সন্তানকে আগলে রাখা মায়ের প্রতীকী ব্যঞ্জনায় অর্ধবিমূর্ত যে শহীদ মিনারের সঙ্গে দেশবাসী আজ পরিচিত তার নকশা করেছেন হামিদুর রহমান ও নভেরা আহমেদ।
ইতিহাস ফিরে আসে। ফিরে আসে পরিহাসের মতো। তখন তাকে বলে ‘আয়রনি অফ হিস্টরি’। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয়। আর ইতিহাস কথা কয়। ইতিহাসের পরম্পরায় যারা পুরোধা-প্রতিম ব্যক্তিত্ব, তারা এসব কথা বলে গেছেন। আমরা শুনিনি। বিস্মরণের জাতি বলে আমাদের কিছুটা হলেও দুর্নাম আছে। এই দুর্নাম ঘোচানো প্রয়োজন। আমাদের জাতির জন্য, সংস্কৃতি আর আত্মপরিচয় সংরক্ষণের জন্য।
মাত্র কয়েক দশক আগে জহির রায়হান লিখেছিলেন ‘আরেক ফাল্গুন’। রঙ, উত্তাপ আর মুখর ধ্বনিপুঞ্জ নিয়ে ফিরে এলো আরেক ফাল্গুন। আমাদের অতীত বিস্মৃতি, জাতির জন্য প্রয়োজনীয় অতি গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডের অসম্পূর্ণতা নিয়ে আমরা ব্যাধিগ্রস্ত। রুগ্ন কোষ-কলার মতো আমাদের সারাদেহে ছড়িয়ে পড়েছে তা। দায়মোচনের অঙ্গীকার নিয়ে এলো এই ফাল্গুন।
আরেক ফাল্গুন। সিকানদার আবু জাফর লিখেছিলেন, জনতার সংগ্রাম চলবেই। নিরন্ন, নিরক্ষর আর নিরন্তর খেটে খাওয়া মানুষ যখন নিজভূমে পরবাসী হয়ে যায়, তার পরিচয় খুঁজে পায় না, তখন সে পথে নেমে আসে। সোচ্চার হয় তার ন্যূনতম অধিকার আর আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে। বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনে তাই ঘটেছিল।
কে জানে কী মন্ত্র আর জাদু আছে পলাশ-মঞ্জুরীর মধ্যে! এই ফাল্গুনে এ দেশের মানুষ বারবার দ্রোহী হয়ে ওঠে।
শেকড় সন্ধান : আন্তর্জাতিক
মাতৃভাষা দিবস
বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠী-উপজাতির ভাষা বিভিন্ন কারণে হারিয়ে যাচ্ছে। এথনিক ক্লিনজিং তার একটি প্রধান কারণ। এই পর্যবেক্ষণটি তিনি তার চিঠিতে উল্লেখ করেন। সেই সঙ্গে বিশেষভাবে তিনি উল্লেখ করেন বাংলাদেশী তরুণদের বীরত্বগাথা যারা ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের প্রথম স্বপ্নটি দেখেন মিঃ রফিকুল ইসলাম। মিঃ রফিকুল ইসলামের জন্ম বাংলাদেশে। তিনি কানাডিয়ান নাগরিক। জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানকে তিনি ১৯৯৮ সালের প্রথম দিকে একটি পত্র লেখেন। এই পত্রে তিনি মহাসচিবকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণার অনুরোধ জানান। বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠী-উপজাতির ভাষা বিভিন্ন কারণে হারিয়ে যাচ্ছে। এথনিক ক্লিনজিং তার একটি প্রধান কারণ। এই পর্যবেক্ষণটি তিনি তার চিঠিতে উল্লেখ করেন। সেই সঙ্গে বিশেষভাবে তিনি উল্লেখ করেন বাংলাদেশী তরুণদের বীরত্বগাথা যারা ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে।
মিঃ রফিককে তার পত্রের উত্তরে পরামর্শ দেয়া হয় প্রস্তাবটি কোন গোষ্ঠী বা সংগঠনের মাধ্যমে ইউনেস্কো (UNESCO) এর কাছে রাখতে। ইউনেস্কো এই প্রস্তাবে সাগ্রহে সাড়া দেয় এবং প্রস্তাবটি আরও কয়েকটি দেশের মাধ্যমে উপস্থাপন করতে পরামর্শ দেয়। প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত হয় বাংলাদেশ, কানাডা, ফিনল্যান্ড, হাঙ্গেরি এবং ভারত। মাতৃভাষা প্রেমিক এই গ্রুপটির প্রেসিডেন্ট হন মিঃ রফিকুল ইসলাম। মিঃ রফিকুল ইসলাম ইউনেস্কোর বিভিন্ন দেশের জাতীয় কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন। ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায় হাঙ্গেরি ও ফিনল্যান্ডের কাছ থেকে। বিষয়টি এক পর্যায়ে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রীর নজরে আসে। শিক্ষামন্ত্রী তৎক্ষণাৎ যোগাযোগ করেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী উল্লাসের সঙ্গে সাড়া দেন প্রস্তাবটি নিয়ে এগিয়ে যেতে।
সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছিল। প্রস্তাবটির চূড়ান্ত দাখিলের সময় ছিলো ১০ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৯ এর মধ্যে। ৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৯ প্রস্তাবটি ইউনেস্কোর সদর দপ্তরে পাঠানো হয়। উল্লেখ্য, বিভিন্ন দেশের সমর্থন আদায়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূমিকা ছিলো বলিষ্ঠ ও প্রশংসনীয়। ইউনেস্কোর প্রস্তাবের প্রতি এ দেশটির অবস্থান ছিলো শক্তিশালী।
১৭ নবেম্বর, ১৯৯৯ ইউনেস্কোর ৩০তম সাধারণ সভায় উপস্থাপিত খসড়া প্রস্তাবটি চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করে ১৮৮ দেশের সমস্ত ভোটই ছিল প্রস্তাবের পক্ষে, বিপক্ষে কোন ভোট পড়েনি।
ইউনেস্কোর ‘ইটালিক টেক্সটি’ ‘International Mother Language Day’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়। প্রস্তাবিত রেজিলিউশন পর্যবেক্ষণের পর মহাসচিবের ব্যাখ্যার উল্লেখযোগ্য কিছু অংশ নিচে উদ্ধৃত করা হলো : Recognizing the unprecedented sacrifice made by Bangladesh for the cause of mother language on 21 February, 1952.
Nothing that this idea has yet not been adopted at the internationnal level;
Proposes that 21 February be proclaimed International `Mother Language Day’ throughout the world to commemorate the martyars who sacrificed their lives on this very date in 1952.
একুশ, প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা
উনিশশ’ বায়ান্ন সালে বাংলা মায়ের শ্রেষ্ঠ সন্তানরা যে অগ্রসর চিন্তা-চেতনা নিয়ে প্রাণ উৎসর্গ করেছিল তার সুফল আজ আমরা ভোগ করছি। একুশের উত্তরসূরি হয়ে এসেছে ভাষার স্বাধীনতা। এসেছে অর্থনৈতিক মুক্তি ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা। জম্ম নিয়েছে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
একুশে ফেব্রুয়ারি ইউনেস্কো কর্তৃক ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের’র স্বীকৃতি পেয়েছে। তার শিরে যুক্ত হয়েছে নতুন মর্যাদার শিখিপাখা। সে পেয়েছে বিশ্ব স্বীকৃতি। এ স্বীকৃতি লাভ অনন্য সাধারণ, কারণ পৃথিবীর অন্য কোন দেশে অনুরূপ ঘটনা ঘটেনি। এ স্বীকৃতি বাংলা ভাষা, ভাষা সংগ্রাম ও ভাষা শহীদদের প্রতি বিশ্ববাসীর শ্রদ্ধা ও সম্মানের প্রত্যক্ষ প্রকাশ। অন্যদিকে এ দিবস বিশ্বের প্রতিটি মানুষকে যেন স্মরণ করিয়ে দেয়, মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসার নৈতিক বাধ্যবাধকতার কথা। একুশের পর আমাদের ভাষা ও সাহিত্যের জানালা খুলে গেছে। সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতির অঙ্গনে যুক্ত হয়েছে সৃষ্টির নতুনত্ব, মুক্ত হয়েছে বোধ ও বুদ্ধি।
আধুনিক বিশ্ব বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, শিল্প-বাণিজ্য, অর্থনীতি, সমাজ-শিক্ষা, ধর্ম সকল ক্ষেত্রেই যথার্থ অবদান রাখতে হলে মাতৃভাষাকে মায়ের মতো শ্রদ্ধা ও ভালবাসা নিয়ে চর্চা করার কোনই বিকল্প নেই। মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা ছাড়া অন্য ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জন্মানো সম্ভব নয়, ফলে তা রপ্ত করাও দুরূহ। বিজ্ঞান-প্রযুক্তির চলমান উৎকর্ষ আর বিশ্বয়নের মতো ঝুঁকিপূর্ণ এ সময়ে মাতৃভাষার যথাযথ চর্চা, প্রয়োগ, সংরক্ষণ, উন্নয়ন এখন যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
লেখক: কবি ও সাংবাদিক
- ‘প্রধানমন্ত্রীর কথার বাস্তবায়ন হতে দিচ্ছে না বিশেষ মহল’
- জামায়াত গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাইছে না: শাহরিয়ার কবির
- ঐক্যফ্রন্ট: দলছুট বুড়ো খোকাদের ‘গোল্লাছুট’
- সিডও সনদের বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত প্রচেষ্টা
- ‘যে পাপ করেছি, তার প্রায়শ্চিত্য করতেই হবে’
- বিএনপির প্রযুক্তি বিরোধিতা নতুন কিছু নয়
- বি. চৌধুরীর কাছে সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজের প্রশ্ন!
- ইতিহাসের কলঙ্কময় অধ্যায় পিলখানা হত্যাযজ্ঞ
- এবার কালো মেয়েকে নিয়ে মন্তব্য করেছেন তসলিমা নাসরিন
- নির্দিষ্ট পরিমাণের পর সম্পদে অধিকার ঠিক না
- তাদের অবশ্যই নির্বাচনে আসতে হবে: ইকবাল সোবহান চৌধুরী
- আল্লাহ-রাসুলের পর বঙ্গবন্ধুকে নেতা মানেন খালেদার উপদেষ্টা
- ‘তারেক রহমানকে ফেরত দিতে যুক্তরাজ্যকে অনুরোধ করা উচিত’
- সন্ত্রাসবাদের কবল থেকে ইসলাম ধর্মকে রক্ষা করতে হবে: হাসিনা
- ‘বিরোধী শিবিরের মেসি হবেন ড. কামাল’
মুশতাকের মৃত্যু
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি
উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের অর্জন নতুন প্রজন্মের : প্রধানমন্ত্রী
পিরোজপুরে পল্লী অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারের ৬শ কোটি টাকার প্রকল্প
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ : প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন আজ
উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ: শনিবার সংবাদ সম্মেলনে আসছেন প্রধানমন্ত্রী